বঙ্কুবাবুর বিয়ে
-শম্পা দেবনাথ
রবিবারের খবরের কাগজ লুকিয়েও কোনো লাভ হয়নি। পাশের বাড়ির রীমার কাছ থেকে চেয়ে আনেন বঙ্কুবাবু। এমন দুবার হওয়ার পর তীর্থ আর খবরের কাগজ লুকোয় না। এই দুজনের পরিচয়টা দেওয়া যাক। এরা দাদু ও নাতি। বঙ্কুবাবুর নাতি তীর্থ ওরফে তীর্থঙ্কর বিশ্বাস। বন্ধুরা টিবি বলে ডাকে। বাগবাজারের বাসিন্দা বঙ্কুবাবুর বয়স ছিয়াত্তর। বয়সের অনুপাতে যথেষ্ট শক্ত ,সমর্থ।এখনও চুলে নিয়মিত কলপ করেন। জিনস পরেন সাথে লাল , নীল , সবুজ রঙের টি শার্ট। তর্জনী ও মধ্যমাতে সেতুবন্ধন করে থাকে গোল্ড ফ্লেক। বেশ নেচে নেচে , গোড়ালি না ফেলে হাঁটেন। মাঝে মধ্যে এদিক ওদিক রে ব্যান সানগ্লাসের ফাঁক দিয়ে ভ্রু কুঁচকে কি যেন জরিপ করেন। তীর্থ দাদু , ও সরি দাদু বলা যাবে না আবার , দাদাই এর সাথে বেরোতে যত না লজ্জা পায় , বঙ্কুবাবু তার থেকে বেশি লজ্জা পান। বলেন , “কি যে ম্যাড়মেড়ে সাতচল্লিশ সালের বিধবাদের মত জামাকাপড় পড়িস। তোকে নিয়ে চলতেও কেমন যেন ডাউন ফিল হয়। একটু ‘কুল ‘ জামাকাপড় পড় , বুঝলি ঢ্যাড়স ।”
তীর্থ লুকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে। বন্ধুদের দাদুর সাথে তুলনা করে। তবে তীর্থর বন্ধুরা খুব উপভোগ করে ব্যপারটা। “হাই হ্যান্ডসাম” বলে ডাক দেয়। আড়ালে “রকিং বুড়ো” বলে। তীর্থ তেত্রিশ বছরের যুবক। সরকারী চাকরি করে। বাড়িতে বিয়ের চাপ সহ্য করে চলেছে। এই নিয়ে অশান্তি চরম হওয়াতে একবার বদলির সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। সেই থেকে কেউ কিছু বলে না।
বাড়িতে আরো একটি নিরীহ প্রানী আছে। আসুন , পরিচয় করিয়ে দি। তমা বিশ্বাস। তীর্থর মা।
তীর্থর বাবা নেই। তীর্থ যখন খুব ছোট , বছর দশেক এর , কার্ডিয়াক ফেলিওর এ চলে যান। তমা এমনিতেই শান্ত , মুখচোরা স্বভাবের মানুষ। স্বামী মারা যাবার পর আরো চুপচাপ হয়ে যান। ইদানীং পুজোর ধুম বেড়েছে। সপ্তাহে পাঁচ দিন , পনের রকম দেব -দেবীর পুজো করে। বিভিন্ন ভাষায় মন্ত্র পাঠ করা শিখছে। কিছু দিন আগেও সপ্তাহে চারদিন উপোস করা শুরু করেছিল। বঙ্কুবাবু এবং তীর্থ দুদিন অনশন ঘোষণা করে ব্যপারটা বন্ধ করিয়েছে। সেই থেকে মুখ চুন করে ঘুরে বেড়ায়। যেন বিরাট পাপ করে ফেলেছে। তার বন্ধুদের সবার ছেলে মেয়েদের বিয়ে হয়ে নাতি নাতনি হয়ে গেছে। ছেলের বিয়েতে অরুচি দেখে চিন্তা হয়। তার প্রদীপের শেষ সলতে তীর্থ। খুবই দুশ্চিন্তায় আছে সে।
খবরের কাগজের প্রসঙ্গে ফিরে আসি। কেন তীর্থ লুকোয় ? বঙ্কুবাবু ঠিক করেছেন , বিয়ে করবেন। তাই বিজ্ঞাপন দেখা চলছে। অল্পবয়সী মেয়ে চাই। পঁচিশ থেকে পঁয়তাল্লিশ। বিজ্ঞাপনটা তীর্থকে দিয়েই লিখিয়েছেন। ” শিক্ষিতা, মিশুকে , চাইনিজ খাবার রান্না জানা , চুলে রঙ করতে জানা , অনর্গল বকবক করা মেয়ে চাই। চাকুরীরতা চলিবে।” পাড়ায়ও বলে বেড়াচ্ছেন।
অনেক ছবি, বায়োডাটা সমেত এসেছে। দিন রাত ঝুঁকে পড়ে মন দিয়ে সাজাচ্ছেন বঙ্কুবাবু। সবই পঁচিশ থেকে ত্রিশের মধ্যে মেয়ে। তমার তো মাথায় হাত। শ্বশুরকে পিতা জ্ঞানে মানে। কিছু বলতেও পারছে না , আবার গিলতেও পারছে না। পিওন আসার সময়টা পুজোর ঘরে ঢুকে বসে থাকে।নিতে পারে না ব্যপারটা মনে হয়। ছেলেকে বলেছে ঘটনাটা। তীর্থ বুঝতে পারছে না কি করবে। একবার বলতে গিয়েছিল দাদুকে। বঙ্কুবাবুর যুক্তি হল , ” তুই বিয়ে করবি না , ঠিক আছে। আমাকে বাঁধা দেওয়ার তুই কে হে হরিদাস । ইটস মাই লাইফ, আফটার অল।” সত্যিই কিছু বলার নেই।
এক শনিবার বঙ্কুবাবু ঘোষণা করলেন , তিনি মেয়ে পছন্দ করে ফেলেছেন। মেয়েটির নাম শ্রীরাধা। একটি স্কুলে পড়ায়। বয়স আঠাশ। বাবা ও মেয়ে থাকেন। বাবা তিনবছর পর রিটায়ার করবেন।
তীর্থ দুবার বিষম খেল কথাটা শুনে। তমা , ঠাকুর ঘরে ঢুকে পড়ল।
পরদিন রবিবার তীর্থর ছুটি। বঙ্কুবাবু বললেন , ” আমি আজ মেয়ে দেখতে যাব । তুই আমার গার্জেন হিসাবে যাবি। তোর নতুন ঠাকুমা আসবে , দেখে শুনে নে।”
তীর্থ না যাওয়ার অনেক বাহানা দিল। ধোপে টিকল না। অগত্যা বিকেলে শ্রীরাধাদের বাড়ি যাওয়া হল। সারা রাস্তা বঙ্কুবাবু শ্রীরাধাকে নিয়ে কত গল্প জুড়ে দিলেন। তীর্থর কোনটাই কানে গেল না। রাগে গা কিরকির করতে শুরু করে দিয়েছে ততক্ষণে।
বেল বাজাতে শ্রীরাধাই দরজা খুলে দিল। বঙ্কুবাবু তীর্থর সাথে আলাপ করিয়ে দিলেন। তীর্থ অবাক হয়ে গেল শ্রীরাধাকে দেখে। অপূর্ব সুন্দর মুখশ্রী , গমরঙা ত্বক , কাঁধ অব্দি চুল। ভীষণই স্মার্ট একটি মেয়ে। একটু পরেই শ্রীরাধার বাবা সুশান্তবাবু এলেন। ওদের দেখে খুব খুশি। শ্রীরাধা বেশ হাসিখুশি। খুব গল্প ,আড্ডা জমে উঠল। তীর্থ আড়চোখে শ্রীরাধাকে দেখতে লাগল। সে ভেবেই পাচ্ছে না , এত সুন্দর ,অল্পবয়সী একটা মেয়ে তার দাদুর মত একজন বয়স্ক মানুষকে কেন বিয়ে করবে! যাইহোক, কিছুক্ষণ ওখানে থেকে ওরা বাইরে চলে এল। বিয়ে নিয়ে কোনো কথাই উঠল না। বঙ্কুবাবুকে জিজ্ঞাসা করতে বললেন, ” ও নিয়ে তুই ভাবিস না। আমাদের আগেই ফোনে সব কথা হয়ে গেছে। ”
বঙ্কুবাবুর বিয়ের দিন ফাইনাল। দুমাস বাকি। তীর্থর নতুন কাজ পড়েছে। প্রায় প্রতি শনিবার বা রবিবার বঙ্কুবাবু তার হবু বৌকে কিছু না কিছু উপহার পাঠান। তাও আবার তীর্থর হাত দিয়ে। তীর্থ অবাক হয়ে যায় শ্রীরাধাকে দেখে। কোনও অস্বস্তি নেই। হাসিমুখে সব নেয়। তীর্থকে চা খাওয়ায়। অনর্গল গল্প করে যায়। তীর্থকে ছাদে নিয়ে নিজের হাতে করা ফুলের বাগান দেখায়। তীর্থ লুকিয়ে লুকিয়ে ওকে দেখে । তীর্থরও আজকাল বেশ ভালো লাগে শ্রীরাধার সাথে সময় কাটাতে। তীর্থ একটু কম কথা বলা মানুষ। ভীষণ পড়াশোনা করে। বন্ধুদের সাথে যদিও ভালোই মেশে। কিন্তু ঘরে কথা কম বলে। শ্রীরাধা কথা বলে যায় , কত গল্প যে ওর জানা তার ইয়ত্তা নেই। তীর্থ মন দিয়ে শোনে। একে ঠাকুমা ভাবতে হবে ভাবলেই বুকটা কেমন করে যেন। এমন আগে কখনও হয় নি।
এদিকে বঙ্কুবাবু বিয়ের তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছেন। চল্লিশ দিন বাকি। মহা উৎসাহে লেগে পড়েছেন। তমা একবার ওনার ঘরের দরজার সামনে দাঁড়িয়েছিল , কিছু বলবে বলে। বঙ্কুবাবু বুঝতে পেরে “যব প্যার কিয়া তো ডরনা ক্যায়া… প্যার কিয়া কোই চোরি নেহি কি…” গানটা জোরে চালিয়ে দিলেন। ঘর ভর্তি বিয়ের তত্ব এনে রেখেছেন। তমা আঁচল মুখে চেপে ধরে চলে গেল।
তীর্থর ওপর দায়িত্ব পড়েছে শ্রীরাধাকে নিয়ে শপিং করানোর। তীর্থ আজকাল কারণে , অকারণে শ্রীরাধাকে ফোন করে। শ্রীরাধা বিয়ে ছাড়া অন্য সব কিছু নিয়ে গল্প করে। একবার সাহস করে জিজ্ঞাসা করেছিল তীর্থ। শ্রীরাধা বলেছে , ” আপনার দাদুকে আমার ভীষণ সুইট লাগে। কত খেয়াল রাখেন আমার। আর এই বয়সী বিয়ে করলে কত লাভ জানেন ?”
” কি লাভ ? তীর্থ উৎসুক।
” আমাকে ছাড়া অন্য কিছু ভাববেন না আমার হাজব্যান্ড । দুই . যা বলব তাই শুনবেন। তিন . নিখাদ ভালবাসা পাব। চার . আমি চাকরি করি। উনি রিটায়ার্ড। ঘরের দেখভাল করবেন। পাঁচ . স্কুল থেকে এলে চা টা দেবেন ,নিশ্চয়ই। ছয় . যত্ন করবেন। সাত. বয়সে বড় বলে কখনও ঝগড়া করবেন না।
এমন আরো অনেক ফায়দা আছে , বুঝলেন তীর্থ? ”
তীর্থ দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফোন রেখে দেয়। কেউ যদি সুইসাইড করতে নাছোড়বান্দা হয় তাকে কোন্ ইয়ে আটকাবে। তবুও মনটা কেন যে খচখচ করে। এত সুন্দর কথা বলে শ্রীরাধা। হাসলে বাম গালে টোল পড়ে। থুতনিতে একটা লাল তিল আছে। দাদুর ওপর খুব রাগ হয় তীর্থর। কেউ এমন করে ? আজকাল বন্ধুদের সাথে আড্ডায় যায় না ও। পাড়ায় ফিসফিস, কানাঘুষো শুনতে পায়। লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে। শ্রীরাধা বিয়ের পর এ বাড়ি এলে ও কোথাও চলে যাবে। বন্ধুদের মেসে গিয়ে থাকবে। এখানে কদাপি নয়। সহ্য করতে পারবে না ও। মনটা কেন যে উদাস হয়ে যায় ! আজকাল স্যাড সঙ গুলো খুব শোনে তীর্থ। দাদাইটা র্নিলজ্বের মত প্রেমের গান শুনছে। কোনো গায়ক -গায়িকা বাদ দিচ্ছে না। তীর্থ থাকলে একটু জোরেই শোনে মনে হয়। বিটকেল বুড়ো একটা। রাগ উঠে যায়। মায়ের জন্য কিছু বলতে পারে না।
দেখতে দেখতে দিনটা চলে এল। কাল বিয়ে। রেজিস্ট্রি ম্যারেজ হবে। সই -সাবুদ হয়ে গেলে পুরোহিত কিছু নিয়মকানুন করিয়ে দেবেন। সারারাত জানলা দিয়ে আকাশ দেখল তীর্থ। ঘুমই এল না। ভোরের দিকে মায়ের কাছে গিয়ে শুয়ে পড়ল। তমাও একটু আশ্চর্য হল, ছেলের এমন আচরণে।
একটা হল বুক করা হয়েছে। সেখানেই সবাই পৌঁছে যাবে সন্ধ্যা সাতটার মধ্যে। দাদাইএর কয়েকজন বন্ধু আসবে। তীর্থকে বলেছিলেন বঙ্কুবাবু ওর বন্ধুদের নিমন্ত্রণ করতে। তীর্থ বলে দিয়েছে , ওর কোনও বন্ধু নেই। তমা তো এমনিতেই সাতে পাঁচে থাকে না। এক দাদা আছে। দেশের বাইরে থাকে। ওরও কেউ আসার নেই। আর এই বিয়ে ঠিক হওয়ার পর তমা মন্দিরে যাওয়া ছেড়ে দিয়েছে। অনেকেই হাসাহাসি করে। হাজার প্রশ্ন। তীর্যক মন্তব্য। কত সহ্য করা যায়?
সকাল থেকে তীর্থ কিছু খায়নি। ভালো লাগছে না কিছু। মাথা ভার। শরীরটা কেমন যেন লাগছে। একটা জমা কষ্ট বুকে। দুটো রজনীগন্ধার মালা নিয়ে সূর্যোভবনে তমাকে নিয়ে হাজির হল সাতটা দশে। শ্রীরাধাকে গোলাপি বেনারসিতে অপূর্ব লাগছে। চোখ সরাতে পারছে না তীর্থ। বঙ্কুবাবু বিউটি পার্লার গেছেন। ওখান থেকে সোজা আসবেন। শ্রীরাধা ও সুশান্ত বাবু এসে গেছেন। ওদের সাথে কিছু আত্মীয় , বন্ধু এসেছেন। রেজিস্টার এখনো আসেন নি। পুরোহিত সব কিছু রেডি করে বসে আছেন। লগ্ন আটটা থেকে নটা। শ্রীরাধা কথায় কথায় বলেছিল যে , ও এসব ধর্মীয় আচার বেশ মানে। আটটা বেজে গেল। বঙ্কুবাবুর পাত্তা নেই। শ্রীরাধা খুব উতলা হয়ে পড়েছে। তীর্থকে বারবার তাড়া দিচ্ছে বঙ্কুবাবু কোথায় দেখার জন্য। তীর্থ ফোন করেছিল দাদাইকে। একবার পেয়েছিল। বঙ্কুবাবু বলেছেন , আসছেন। কিন্তু এখন ফোন সুইচ অফ বলছে । সাড়ে আটটা বেজে গেছে। শ্রীরাধা বলছে , নটার মধ্যে বিয়েতে বসতেই হবে। লগ্নভ্রষ্ট্রা হতে পারবে না। তাহলে সুইসাইড করবে। পৌনে নটা বাজে। তীর্থ ভীষণ ভয় পেয়ে গেল। শ্রীরাধার কথা ভাবছে।কি করবে সে। রাগ হচ্ছে খুব দাদাইএর ওপর। বুড়ো গেছে সাজতে, ভীমরতি। সুশান্ত বাবুও এদিক ওদিক পায়চারী করছেন। নটা বাজতে পাঁচ। বঙ্কুবাবু আসেন নি এখনো। শ্রীরাধা তীর্থকে গভীর দৃষ্টিতে দেখল। তীর্থ একমুহূর্ত আর সময় নষ্ট করল না। চেয়ার থেকে হাত ধরে শ্রীরাধাকে টেনে তুলল। মাকে অন্য হাতে ধরে সোজা পুরোহিতের কাছে এসে দাঁড়াল। সুশান্ত বাবুও এগিয়ে এলেন।
” আমায় বিয়ে করবেন শ্রীরাধা ? আমি আপনার যোগ্য কিনা জানি না। কিন্তু আপনাকে আমি বিয়ে করতে চাই। ” তীর্থ এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে ফেলে।
শ্রীরাধা মৃদু হেসে সম্মতি দেয়। উপস্থিত সবাই হাততালি দিয়ে ওঠে। পুরোহিতের মন্ত্রোচ্চারনের মধ্যে সংক্ষেপে তীর্থ ও শ্রীরাধার বিবাহ সম্পন্ন হয়। সুশান্ত বাবু কাকে যেন ফোন করে আসতে বলেন। তীর্থ ও শ্রীরাধা সবার আশীর্বাদ নেয়। এমন সময় হই হই করতে করতে চার-পাঁচ জন বন্ধু নিয়ে ঢোকেন বঙ্কুবাবু।
” কি রে ঢ্যাড়স , বিয়ে করে নিলি আমায় ফেলে ?”
” তুমি কোথায় ছিলে ? আমি কি করব। শ্রীরাধা লগ্নভ্রষ্ট্রা হবে বলে ভয় পাচ্ছিল। তুমি যদি বল তাহলে আমি বিয়ে ক্যানসেল করে দি। তুমি করে নাও।” তীর্থ কাঁচুমাচু মুখ করে বলে।
সুশান্ত বাবু , বঙ্কুবাবু ও শ্রীরাধা খুব হাসতে থাকে।
” আরে সাধে কি তোকে ঢ্যাড়স বলি। বই পড়ে পড়ে তোর বাস্তব বুদ্ধিটাই হল না। এটা তো আমাদের প্রি প্ল্যান ছিল। তুমি সোজা নাক ধরবে না। তাই ঘুরিয়ে ধরালাম। বুঝলে চাঁদু। শ্রীরাধাকে দেখে তো প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছিলি। ” বঙ্কুবাবু হো হো করে হেসে ওঠেন।
” কিন্তু বাবা , আপনি আমায় তো বলতে পারতেন।” তমা ভীষণই অবাক।
” তোমায় বললে তীর্থ জেনে যেত বৌমা । মিশন সাকসেস হত না।” বঙ্কুবাবু সান্ত্বনা দেয় তমাকে।
তীর্থ আজ তার জীবনে অনেকগুলো মানুষের অবদানের কথা ভাবছে। বিশেষ করে ,দাদাইএর কথা। বাবা বেঁচে থাকলেও এভাবে তীর্থকে নিয়ে ভাবত কিনা জানা নেই। কি অদ্ভুত মানুষ দাদাই।
“আচ্ছা , আপনি খুশি তো ? ” বাসর রাতে তীর্থ তার জীবনসঙ্গীকে ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞাসা করে।
শ্রীরাধা হাসে। বলে ,” আপনার দাদুর সাথে মিলেই এটা করেছি আমরা। পছন্দ তো ছিলই আপনাকে।”
বাইরে একটু একটু করে আলোর প্রকাশ হচ্ছে। তীর্থ ও শ্রীরাধা বারান্দায় এসে সূর্যোদয় দেখতে থাকে। তীর্থ অবাক হয়ে তার নতুন বউকে দেখে। শ্রীরাধার আলো ঝলমলে মুখটা আজ নতুন ভাবে দেখা সূর্যের মত মনে হচ্ছে।।
খুব ভালো লাগলো গল্পটা পড়ে।
খুব সুন্দর সুন্দর ছোট গল্পের লেখিকা সম্পা দেবনাথ । এটাও খুব সুন্দর জমজমাট গল্প।
উনার লেখার সবচেয়ে বড় গুন হল সমাজকে একটা বার্তা দেওয়া সেই সাথে গল্পের উপসংহারে ইতিবাচক চিন্তাভাবনা।
আরো লিখুন । আমাদের মত নগন্য পাঠকেরা সব সময় নতুন কিছু খোঁজে, আপনার লেখা পড়ে খুব তৃপ্তি পাই।
আপনার গুণমুগ্ধ পাঠক—–আতাউর রহমান